Home Uncategorized দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর চায় শহীদ শিশুদের পরিবার

দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর চায় শহীদ শিশুদের পরিবার

by Londonview24
0 comment

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার পর গতকাল সোমবার রাজধানীসহ সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিশুহত্যার বেদনাবিধুর ঘটনাগুলো। আদালত গণহত্যার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার রায়ের পর শহীদ শিশুদের পরিবারগুলোর মনে সৃষ্টি হয়েছে অদ্ভুত অনুভূতির মিশেল, বিচার পাওয়ার স্বস্তি এবং সন্তান হারানোর অপূরণীয় বেদনা। তাদের একমাত্র দাবি, রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়। অনেকের মত, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই যেন এ দায়িত্ব সম্পন্ন করে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, জুলাই বিপ্লবে নিহত দুই হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশই শিশু। তাদের মধ্যে রয়েছে আবদুল আহাদ (৪), জাবির ইব্রাহিম (৬), রিয়া গোপ (৬), হোসেন মিয়া (১০), সাফকাত সামির (১১), সামিও আমান নূর (১৩), সৈয়দ মুনতাসির রহমান আলিফ (১৪), মোহাম্মদ আদিলসহ (১৬) অসংখ্য শিশু।

বাবার কোলেই শহীদ হয় জাবির

গত বছরের ৫ আগস্টের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় ছয় বছরের জাবির ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হয়। মা রোকেয়া বেগম ও বাবা কবির হোসেন কয়েকটি হাসপাতালে ছুটে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বাবার কোলেই দুইবার ‘বাবা’ ডেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে জাবির।

বাবা কবির হোসেন বলেন, আদালত শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দিয়েছে, এটাই ট্রাইব্যুনালের সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে রায় শুনে খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই, এটা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কোনো শহীদ পরিবারই স্বস্তি পাবে না।

মা রোকেয়া বেগমের কণ্ঠে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড না হয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল। তাকে আয়নাঘরে রেখে ছোট্ট একটা ঘরের মধ্যে রেখে সারা জীবন ওই ঘরের মধ্যে পচে মরার জন্য ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। আপন মানুষ হারানোর বেদনা সে বুঝত, যদি তার ছেলে জয়কে তার সামনে গুলি করে মারা হতো।

শহীদ রাহাত- মরলে মরমু, দেশের জন্য শহীদ হমু

জুলাই বিপ্লবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি সফল করতে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই গাজীপুর থেকে ঢাকার উত্তরায় আসে রাহাত হোসেন শরীফ (১৬)। সেখানে এসে দেখে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উত্তরার সড়ক-মহাসড়ক। সেখানে সড়কে পড়ে থাকা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার গুলিবিদ্ধ লাশ ও আহতদের সরিয়ে নিয়ে পাঠায় হাসপাতালে। হেলিকপ্টার থেকে র‌্যাব সদস্যরা তা দেখে গুলি করে রাহাতকে হত্যা করে। আমার দেশকে এ কথা জানান তার বন্ধু শাহরিয়ার নাফিস। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে রাহাত বলেছিল, ‘মরলে মরমু, দেশের জন্য শহীদ হমু’। এ সাহসী শিশুর মা স্বপ্না আমার দেশকে বলেন, হাসিনা ও কামালের ফাঁসির রায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো খবর। আল্লাহ যেন ইহকালে হাসিনার ফাঁসি কার্যকর আমাকে দেখিয়ে নেন। সেই সঙ্গে পরকালে এ খুনিকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করেন।

গুলিবিদ্ধ হয়েও থেমে যায়নি আলিফের আন্দোলন

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ১৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী আলিফ ‘কমপ্লিট শটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রথমবার গুলিবিদ্ধ হয় ১৮ জুলাই। তবুও আন্দোলন থেকে সরে যায়নি। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে দ্বিতীয়বার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সে শহীদ হয়। তার বাবা সৈয়দ গাজিউর রহমান আমার দেশকে বলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে ৫ আগস্ট নৃশংসভাবে হত্যা করে খুনি হাসিনার বাহিনী। তার ফাঁসির রায় যেন এ সরকারের আমলেই কার্যকর হয়।

রিয়া গোপ ও মোহাম্মদ আদিল: নীরব শোক, দ্রুত বিচারের দাবি

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আদিলের বাবা আবুল কালাম জানান, আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এমন রায়ই আশা করেছিলাম। শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে। তার জন্য ১৭ বার ফাঁসির রায় হওয়া উচিত। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দুই হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার বিচারে হাসিনার দুই হাজার বার ফাঁসির রায় হওয়া দরকার। তবে আমরা প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। এখন শুধু চাই দ্রুত কার্যকর হোক।

এ বিষয়ে শহীদ রিয়া গোপের বাবা দীপক কুমার গোপের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হলেও শহীদ পরিবারগুলোর আকাঙ্ক্ষা এখন একটাই, রায় দ্রুত কার্যকর হওয়া।

You may also like

Leave a Comment