পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল আসিম মুনির প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তবে তারা ‘বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমাদের মনে হয়, আমরা ডুবে যাচ্ছি (ধ্বংস হচ্ছি), তাহলে আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে নিয়ে ডুববো।’
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী ও ট্যাম্পার সম্মানসূচক কনসাল আদনান আসাদের আয়োজিত এক নৈশভোজে এ বক্তব্য দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০ জন ফ্লোরিডাভিত্তিক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অংশ নেন।
মুনির গত দুই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। এর আগে ১৮ জুন তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে ট্রাম্পকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য নোবেল পুরস্কারের সুপারিশ করেছিলেন। ফ্লোরিডার অনুষ্ঠানেও তিনি সেই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভারতের ইন্দুস নদীর উপর বাঁধ বা অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে মুনির কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, এমন কিছু হলে পাকিস্তান সেটি ধ্বংস করতে দ্বিধা করবে না, কারণ তাদের মিসাইলের কোনো ঘাটতি নেই।
পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ইন্দুস ওয়াটার্স ট্রিটি স্থগিত করায় ২৫ কোটি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে দাবি করেন মুনির।
তার ভাষায়, ‘আমরা অপেক্ষা করব ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আর তৈরি করলেই দশটি মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করব। ইন্দুস নদী ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়… আমাদের মিসাইলের কোনো অভাব নেই, আলহামদুলিল্লাহ।’
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের নবায়নকৃত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই মুনিরকে এমন স্পষ্ট ও আগ্রাসী হুমকি দেওয়ার সাহস জুগিয়েছে, তাও আবার আতিথ্যদাতা দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে।
ফ্লোরিডা সফরে মুনির যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলার বিদায়ী অনুষ্ঠানে। কুরিলাকে গত ২৬ জুলাই পাকিস্তান তাদের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান নিশান-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করে, প্রায় দুই দশকের মার্কিন উপেক্ষার পর পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ফেরানোর জন্য। এ সফরে মুনির দেখা করেন কুরিলার উত্তরসূরি অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার এবং যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনের সঙ্গে।
সাম্প্রতিক চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ প্রসঙ্গে ধর্মীয় উদ্ধৃতি টেনে মুনির বলেন, এটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, যেখানে ‘নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের শাহাদাত’ ঘটেছে। তিনি আবারও ঘোষণা করেন, কাশ্মীর পাকিস্তানের ‘জীবনীশক্তির শিরা’। তবে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হত্যার নেপথ্যে মুনিরের এমন উগ্র ধর্মীয় বক্তব্যই বড় কারণ।
মুনিরের ভারতবিরোধী বিস্তৃত হুমকির মধ্যে ছিল পূর্ব ভারত থেকে হামলা শুরু করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত—যা সম্ভবত দিল্লির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-সংক্রান্ত অস্থিরতার প্রতি ইঙ্গিতবহ। তিনি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন নিয়েও কটাক্ষ করেন এবং পাকিস্তানের ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রাখার সক্ষমতা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানি সামরিক ওয়েবসাইটগুলো মুনিরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছে—দেশটির ‘কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সাফল্য আল্লাহর রহমত, জাতীয় ঐক্য, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সশস্ত্র বাহিনীর অতুলনীয় পেশাদারিত্বের ফসল।’
ইত্তেফাক