Home Bangladesh সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ার ফলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে।

সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ার ফলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে।

by Londonview24
0 comment

সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনালের অভাবে এই রপ্তানি এখন পর্যন্ত ঢাকা থেকে পরিচালিত হতো। প্রথমবারের মতো সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) স্পেনের উদ্দেশ্যে প্রথম চালান পাঠানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি শুরু হবে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর ফলে সিলেটে বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে।

সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল না থাকার কারণে এতদিন এসব পণ্য ঢাকা থেকে রপ্তানি করতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকেই সরাসরি রপ্তানির দাবি উঠছিল। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় সেই দাবি এখন পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সাবেক সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, “ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়া এ অঞ্চলের রপ্তানিকারকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এর ফলে সিলেটের পান, সাতকরা, লেবু, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিতে পারবেন।”

ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, “ঢাকার পর ওসমানীতে দ্বিতীয় কার্গো স্টেশন তৈরি হয়েছে। প্রথমদিকে ইউরোপের কয়েকটি দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে।”

তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্লাইট চালু হলেও এখনই সরাসরি সিলেটে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে না, কারণ এখানে আধুনিক প্যাকিং হাউসের অভাব রয়েছে।

এ বিষয়ে হাফিজ আহমদ বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপনের মাধ্যমে সিলেট থেকে দ্রুত পচনশীল পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে। তবে বর্তমানে তা সম্ভব নয়, কারণ শাকসবজি রপ্তানিতে বিশেষ আরএ-থ্রি প্রটোকল ও উন্নত প্যাকিং সুবিধা প্রয়োজন, যা এখানে তৈরি করতে হবে।”

এতদিন ভারতীয় পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করত, কিন্তু ৮ এপ্রিল ভারত এই সুবিধা বাতিল করেছে। এরপর সড়কপথে দিল্লি হয়ে আকাশপথে কার্গো পরিবহনের বিকল্প হিসেবে ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন না ঘটাতে সরকার সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই একই ধরনের কার্গো সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে, যার মধ্যে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইউডিএস) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১০০ টন ধারণক্ষমতার কার্গো টার্মিনাল ২০২২ সাল থেকেই প্রস্তুত ছিল, তবে নানা কারণে এতদিন চালু হয়নি। অবশেষে স্পেনের ইনডিটেক্সের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রোববার থেকে কার্গো ফ্লাইটের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

পণ্য রপ্তানির পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), এবং কার্গো ফ্লাইটের নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্বে থাকবে বেবিচক, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

আজ রোববার কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সচিব নাসরীন জাহান, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এবং মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।

You may also like

Leave a Comment