বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন বলেছেন, শ্রমিক কৃষকসহ মেহনতি মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। আর এ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরোও বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে অবিলম্বে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দিতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুবা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃস্টি হতে পারে। মব সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন শক্ত হাতে দমন করা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ সম্পন্ন করা, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং অর্থপাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনা, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে করা বাংলাদেশের সকল গোপন চুক্তি প্রকাশ করে তা বাতিল করার জন্য তিনি জোর আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ আবারো রাস্তায় নেমে আসতে পারে বলে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট নগরীর ক্বীন ব্রীজ সংলগ্ন সারদা হলে “সমাজতন্ত্র কায়েম করো, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ো” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সিলেট জেলা সম্মেলন এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
উদীচী সিলেটের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান অতিথি কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন। এর আগে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সিলেট জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে সিলেট নগরীতে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড খন্দকার লুৎফর রহমান, সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি কমরেড বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি কমরেড হাবিবুল ইসলাম খোকা ও চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক এস এম শুভ, চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সবুজ তাঁতি ও উদীচী সিলেটের সভাপতি প্রদীপ দেবরায়, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সাহসী ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা জাতীয় মজুরি কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা করা, চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকার প্রদানসহ দৈনিক মজুরি ছয়শত টাকা নির্ধারণ, পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করে জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানান। এসময় তারা বলেন, গণসংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করে শিক্ষাক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সাম্রাজ্যবাদীদের ইন্ধনে রাখাইনে করিডোর স্থাপনের মাধ্যমে দেশকে অনিরাপদ করে তোলা, লাভজনক নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া এবং দেশের মাটিতে বিদেশিদের অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের মতো এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি বক্তারা জোর আহবান জানান।
সবশেষে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সৈয়দ ফরহাদ হোসেনকে সভাপতি এবং খায়রুল হাছানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সিপিবির সিলেট জেলা কমিটি গঠন করা হয়।