Home BangladeshSylhet বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠক

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠক

by Londonview24
0 comment

‘সিলেট নগরীর প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা’

সিলেট নগরীর প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও আইনের কঠিন প্রয়োগ। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের জন্য যথাযথ একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের পাশাপাশি বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও মানবদেহে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টিকারী প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পেইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে ‘প্লাস্টিক দূষণ ও নগর সিলেট’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ ও নগর বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব মন্তব্য করেন। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে এ গোলটেবিল বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও সিলেটের স্থানীয় গণমাধ্যম সিলেট ভয়েস।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা সিলেট নগরীর প্রাকৃতিক ছড়া ও সুরমা নদীর তলদেশ ভরাটের কারণে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার জন্য ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণ ও বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান।

বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান এবং এ লক্ষ্যে গৃহিত সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা ব্যক্ত করে নাগরিক সমাজকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আরো কার্যকরভাবে অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানান।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের আহবায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট ভয়েসের প্রকাশক সেলীনা চৌধুরী ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ের উপর তথ্য উপস্থাপন ও বৈঠক সঞ্চালনা করেন সিলেট ভয়েসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দ্বোহা চৌধুরী।

বৈঠকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৃতিতে এই প্লাস্টিকগুলো আসে কোথা থেকে? কারণ জনসচেতনতা নেই। এখন আমরা দেখি গরম চা-খাবার দেয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের কাপে-বক্সে। এখানে গরমে প্লাস্টিক গলে খাবারে মিশছে। ক্যান্সার-কার্ডিওভাসকুলার ডিসিসের মতো রোগ হচ্ছে প্লাস্টিকের কারণে। এটি একটি নীরব মহামারি। সিগারেট যেমন ক্ষতি করে, প্লাস্টিকও তেমন ক্ষতি করে। সিগারেটের মতো একটা লাইন প্রচারে আনতে পারি যে প্লাস্টিক ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’

শাবিপ্রবির পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. বিজিত কুমার বণিক বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দেখি প্লাস্টিক জড়ো করে উন্মুক্তভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়, এটি কিন্তু মারাত্মক দূষণ। এখান থেকে ডায়োক্সিন, ফিউরানের মতো বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়, এরা হচ্ছে কার্সিনোজেনিক অর্থাৎ ক্যান্সার উৎপন্ন করে। এই গ্যাসগুলো আবার বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘদিন ধরে থাকে।’

তিনি বলেন,  ‘প্লাস্টিক দূষণের মাধ্যমে বায়োএকুমুলেশন হচ্ছে। পানি থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নিচ্ছে, তাকে খাচ্ছে ছোট মাছ, সেই ছোটমাছকে খাচ্ছে বড় মাছ, সেখান থেকে আমরা মাছ খাচ্ছি। এভাবে বায়োএকুমুলেশন হচ্ছে।’

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ একলিম আবদীন বলেন, ‘সিলেট নগরীতে দৈনিক বর্জ্য উৎপাদন হয় প্রায় ৪৭৫ টন, যার মধ্যে আমরা সংগ্রহ করতে পারি ২৪৫ টন। বর্জ্যের বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে ছড়া-খালে। আমাদের মূল ফোকাস করা উচিত, সেটা হচ্ছে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক। সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে যদি এই প্লাস্টিক বর্জ্যকে ভ্যালু চেইনের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তাহলে এটা একটা বিজনেস মডেল হিসেবে দাড়াবে এবং ফলপ্রসূ হবে।’

তিনি বলেন, ‘লাফার্জ-হোলসিম ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে একটি ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে ১২০-১৫০ টন বর্জ্য এর মধ্যে প্রসেস করা হয় এবং এর মধ্যে ৩৫-৪০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য লাফার্জ নিয়ে যায় এবং তাদের চুল্লীতে পুড়িয়ে ফেলছে। এই পরিমাণটা বাড়ানো যাচ্ছে না ভেজা বর্জ্যের কারণে। এ কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বায়োড্রায়িংয়ের চিন্তা করা হচ্ছে, এতে আরো বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য প্রসেস করা যাবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‌‌‘২০০২ সাল থেকে প্লাস্টিক আইনগতভাবে বন্ধ এবং এর আইনগত দায়ভার পরিবেশ অধিদপ্তরের। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, কিন্তু ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি জেনারেশন আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। এই বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণা প্রয়োজন, এটার পিছনে সাইকোলজিটা কী।’ 

তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় বলা হয় যে পলিথিনের কারখানা বন্ধ করে দিলেই হয়। কিন্তু আমরা ২০০২ সাল থেকে চেষ্টা করেও হচ্ছে না, কারণ এই ধরণের কারখানা পুরাতন ঢাকার এত ছোট ছোট ঘরে যে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর পলিথিনের একটি সাইকোলজি সৃষ্টি হয়ে গেছে যে সবকিছুতেই পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে, পলিথিন-মাইক্রোপ্লাস্টিক ক্ষতিকর, এটা মানুষ বুঝতে পারছে।’

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের পাস্ট কান্ট্রি গভর্নর লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) আতাউর রহমান পীর, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আউয়াল, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আক্তার, শাবিপ্রবি’র স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কৌশিক সাহা, লেখক-সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী, ইকোলাইনারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল কিবরিয়া, ক্লিন সিটি সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজিব আহমেদ।

You may also like

Leave a Comment